তথ্য অধিকার আইন

তথ্য জানা আমাদের মৌলিক অধিকার
Subscribe

Archive for the ‘তথ্য অধিকার বিলিপত্র’

আমার দেশ, আমার অধিকার, আমার দায়িত্ব

February 16, 2014 By: information Category: তথ্য অধিকার বিলিপত্র

আমার দেশ, আমার অধিকার, আমার দায়িত্ব

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯
আমাদের দেশের সংবিধানে, অর্থাৎ দেশের সর্বোচ্চ আইনে, পরিষ্কার করে বলা আছে: “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ”।
কিন্তু আমরা জানি কার্যতঃ তা হয় না। তাহলে এ ব্যাপারে আমরা কী করতে পারি?

কিভাবে আমাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা হবে?
এর একমাত্র উত্তর হচ্ছে যে দেশের নাগরিকদেরই সেই মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংবিধান আমাদের যে অধিকার দিয়েছে, সে অধিকার কার্যকর করা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। তবে এই অধিকার আপনা আপনি প্রতিষ্ঠিত হবে না, তা অর্জন করতে হবে। আমাদের অধিকার আমাদেরই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একাজে একটি অতি শক্তিশালী হাতিয়ার হচ্ছেঃ তথ্য অধিকার আইন ২০০৯

তথ্য অধিকার আইনের লক্ষ্য কি ?
তথ্য অধিকার আইনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সকল সরকারি ও জনগণের পয়সায় পরিচালিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্তৃপক্ষের কাজের ওপর-
* জনগণের তদারকি করার ব্যবস্থা স্থাপন করা।
* তাদের কাজে স্বচ্ছতা আনা।
* জনগণের কাছে এসব কর্তৃপক্ষকে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহি করা।
* স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দূর্নীতি কমানো ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
* এক কথায়, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা।

আইনটির মাধ্যমে কিভাবে কোনো কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করা যায়?
* কর্তৃপক্ষের কাজ ও কাজের প্রক্রিয়া স্ংক্রান্ত সবরকম তথ্য-উপাত্ত জনগণের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়ার মাধ্যমে;
* অফিসের ফাইল-পত্র, যাবতীয় দলিল-দস্তাবেজ, রিপোর্ট, বই খাতা, সিদ্ধান্তসমূহ জনগণের দেখার/জানার সুযোগ করে দেওয়া ;
* সরকারী কাজে গোপনীয়তার ও তথ্য না দেবার বহুদিনের সংস্কৃতি এবং মানসিক বাধা দূর করে স্বচ্ছ ও নাগরিকবান্ধব প্রশাসন ব্যবস্থা সৃষ্টি করার মাধ্যমে।

তথ্য অধিকার আইনে “তথ্য” বলতে কি বোঝায় ?
যেকোনো সরকারি বা জনগণের পয়সায় পরিচালিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের দাপ্তরিক কাজ সম্পর্কে এবং সেসব কাজে ব্যবহৃত বা সৃষ্ট যেকোন বিষয়, বস্তু, লিখিত রিপোর্ট বা সামগ্রী ইত্যাদিকে তথ্য বলে। যেমন, অফিসের ফাইলপত্র, দলিল-দস্তাবেজ, লগবুক, নকশা, মানচিত্র এবং সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত কাগজপত্র ইত্যাদি।

তথ্য অধিকার আইন কেন ?
সরকারি কাজ নিয়ম-মাফিক হচ্ছে কিনা অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি আইন ও নীতিসমূহ মেনে কাজ করছে কিনা এই ধরনের তথ্য জানতে তথ্য অধিকার আইন সহায়তা করে। আগে এসব তথ্য দিতে যে কঠিন গোপনীয়তা রক্ষা করা হত তা দূর করে সরকারি কাজে স্বচ্ছতা আনা ও জনগণের কাছে তা উন্মুক্ত করে দেয়া আইনটির মূল লক্ষ্য। এর মাধ্যমে দুর্নীতি দূর ও গণতন্ত্রকে আরো কার্যকর করা যায়। এক কথায়, সরকারি কাজে জনগণের তদারকি করার অধিকার এই আইনটির মাধ্যমে কার্যকর করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনগণ সরকারের কাছ থেকে তার কাজের হিসেব এখন আইনতঃ চাইতে পারে। আইনটির ফলে বৃটিশ আমলে সৃষ্ট “সরকারি গোপনীয়তা আইন” বেশীরভাগই অকেজো হয়ে গেছে। সরকার এখন জনগণকেএই আইন অনুযায়ী কিছু কিছু তথ্য বাদে সরকারের কাছে আছে এরকম অন্যসব তথ্য দিতে বাধ্য। তবে জনগণ এই অধিকারটি কাজে না লাগালে সরকারি কাজে কোনো পরিবর্তন আসবে না। জনগণকে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে আবেদন করতে হবে। তথ্য না পেলে আইনটিকে কাজে লাগিয়ে তথ্য কমিশনের কাছে অভিযোগ করে কার্যসিদ্ধি করতে হবে।

Leaflet RIB-RTI-WB-9-01-2014-PDF Page 1

আইনটি ব্যবহার করে আমরা কি ধরনের সুফল পেতে পারি? আইনটি ব্যবহার করে আমরা:
* আমাদের ব্যক্তিগত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর নজরদারি করতে পারি (যেমন, ভিজিএফ কার্ড, পাসপোর্ট, লাইসেন্স ইত্যাদি নিয়ম-মাফিক দেয়া হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তথ্য চাওয়ার মাধ্যমে)
* স্থানীয় ও সামাজিক সমস্যাসমূহ সমাধানে (যেমন, রাস্তাঘাট ঠিকমত পরিস্কার/ মেরামত রাখতে/করতে, স্কুল-কলেজ ঠিকমত পরিচালিত হচ্ছে কিনা; সরকারী ক্লিনিক ঠিকমত কাজ করছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য চেয়ে) কর্তৃপক্ষকে সচেতন/ উদ্যোগী/ বাধ্য করতে পারি।
* দেশের/জাতির সামগ্রিক উনড়বয়ন-বিষয়ক যাবতীয় সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা স্থাপনে ও দুর্নীতি কমাতে ভূমিকা পালন করতে পারি (যেমন, টেন্ডার, চুক্তি, লাইসেন্স প্রদান, পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি যেসব কাজেই কারচুপি/দুর্নীতির সম্ভাবনা আছে সেখানেই তথ্য চেয়ে কর্তৃপক্ষকে সাবধান/সজাগ করে দেয়া)।

তথ্য অধিকার আইনের মূল উপাদান সমূহ কি?
আইনটির ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়মকানুন ও বিধিনিষেধ মেনে চলার বিধান আছে। সেগুলো মূলতঃ নিম্নলিখিত বিষয় সংক্রান্ত:
* তথ্য বলতে কি বোঝায়?
* কে/কারা (ডিম্যান্ড সাইড) তথ্য চাইতে পারে?
* কোন্ কোন্ তথ্য দিতে কোনো কর্তৃপক্ষ (সাপ্লাই সাইড) বাধ্য নয়?
* কার কাছে তথ্য চাইতে হবে?
* কিভাবে তথ্য চাইতে হবে?
* কতদিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে আবেদনের জবাব দিতে হবে?
* ঠিকমত বা সময় মত অথবা আদৌ জবাব না পেলে কার কাছে আপিল করতে হবে?
* কতদিনের মধ্যে আপিল কর্তৃপক্ষকে জবাব দিতে হবে?
* আপিলের জবাব না পেলে কিভাবে তথ্য কমিশনের কাছে অভিযোগ করতে হবে?
* তথ্য কমিশনের কাজ কী? (যেমন, বিরোধ নিষ্পত্তি করা, তথ্য প্রাপ্তিতে সহায়তা করা বা কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করা)
* তথ্য কমিশনের কাজে সন্তুষ্ট নাহলে কী করা যায়, ইত্যাদি।
যারা আইনটি সম্বন্ধে আরো ভালো করে জানতে চান কিংবা আবেদনপত্র লিখতে সহায়তা চান তারা নীচের ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন। তবে কোন্ বিষয়ে আবেদন করতে চান কিংবা নির্দিষ্ট কোনো প্রশড়ব ঠিক করে যোগাযোগ করাই ভালো। মনে রাখতে হবে যে, আইনটি ব্যবহার করে আপনার নিজস্ব কোনো সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা যেমন আপনি করতে পারেন, তেমনি স্থানীয় কোনো সমস্যা, তথা সমাজ বা দেশের/রাষ্ট্রের উপকারে আসে এমন কোনো সমস্যাকে মাথায় রেখে আইনটির ব্যবহারে উদ্যোগ নিতে পারেন। আমরা সবাই মিলে কাজটি করতে পারলে আমাদের দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এর সুদূর প্রসারী প্রভাব যে কী রূপ ধারন করতে পারে তা কাউকে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না।

তথ্য অধিকার আইন সংক্রান্ত যে কোন সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন:
রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস্ বাংলাদেশ (রিইব)
বাড়ি # ১০৪, রোড # ২৫, ব্লক # এ, বনানী, ঢাকা- ১২১৩।
ফোন # ৮৮০-২-৯৮৪০৮৩০-১
ই-মেইল : rib@citech.bd.com
ওয়েব সাইট : www.rib-rtibangladesh.org
www.rib-kajolimodel.org,
www.rib-bangladesh.org
http://english.rib-rtibangladesh.org/
রিইব- এর তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কিত প্রকাশনা:
০১. তথ্য অধিকার আইনের সহজপাঠ
০২. আমার তথ্য জানার অধিকার
০৩. বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী
০৪. সরকারী সেবামূলক কর্মসূচী ও কর্তৃপক্ষের তালিকা