তথ্য অধিকার আইন

তথ্য জানা আমাদের মৌলিক অধিকার
Subscribe

সম্ভাব্য প্রশ্নমালা

তথ্য আবেদন সহায়িকাঃ বিভিন্ন খাতে সম্ভাব্য প্রশ্নের তালিকা

২০০৯ সালের ১লা জুলাই থেকে বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন চালু হয়েছে। তারপর দু’বছরের বেশী সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও এই ঐতিহাসিক আইনটির মূল উদ্দেশ্য এবং এর অসীম সম্ভাবনার কথা দেশের জনগণ সম্যকভাবে উপলব্ধি করেছে বলে মনে হয় না। পত্র-পত্রিকার লেখালেখিতে, টিভি টকশোতে বা সেমিনারের বক্তব্যে আইনটি সম্বন্ধে যেসব কথা বলা হয় তাতে তথ্যের ওপরেই বেশী জোর দেওয়া হয়। মনে হয় জনগণের তথ্যপ্রাপ্তিই আইনটির মূল লক্ষ্য। এর মূল লক্ষ্য যে সরকারী কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা স্থাপন করা তা পরিষ্কার ক’রে বোঝানো হয় না- বোঝানো হয় না যে এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্যেই সরকারী ও কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাদের কাজ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রাপ্তির অধিকার আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল নাগরিককে দেয়া হয়েছে । [এই লেখায় যেখানে সরকারী কর্তৃপক্ষ বলা হয়েছে সেখানে এইসব বেসরকারী কর্তৃপক্ষের কথাও বলা হয়েছে ধরে নিতে হবে।] তাই আইনের এই উদ্দশ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত তথ্যের  সংজ্ঞাও সাধারণ অর্থে তথ্যের সংজ্ঞার মধ্যে যে বিশাল প্রভেদ আছে তা পরিষ্কারভাবে জনগণের বোঝা দরকার । তথ্য অধিকার আইনের লক্ষ্য সেই সব তথ্য যা জনগণকে সংলিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে আদায় করতে হয়, কারণ সাধারণতঃ এসব তথ্য তারা প্রকাশ করতে চায় না।

তাই মনে রাখতে হবে, তথ্য অধিকার আইনে তথ্য হচ্ছে সরকারী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত যাবতীয় তথ্য যা সাধারণত প্রকাশ করা হয় না। এগুলো সরকারের কর্মকাণ্ডের ভেতরকার খবর যা কোন সরকারী কর্তৃপক্ষ আগে প্রকাশে বাধ্য ছিল না। এসব তথ্য স্বেচ্ছায় কোন সরকারী দপ্তর/কর্মকর্তা জনগণকে দিতে চায় না। এক কথায়, সরকারী কাজ সংক্রান্ত যেসব তথ্য (যেমন- সরকারী কর্মচারীর কাজের হিসেব, অফিসের মিটিঙের কার্যবিবরণী, সরকারী কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে কারা জড়িত তার বিবরনী, কোনো চুক্তি পত্রের শর্তাদি ইত্যাদি) জনগণ জানতে পারলে তারা সরকারী কাজের প্রনালী, তার স্বচ্ছতা, তার সঙ্গে কোন দুর্নীতি জড়িত আছে কিনা এবং কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা ইত্যাদি সম্বন্ধে ধারণা করতে পারে, সেইসব তথ্যই তথ্য অধিকার আইনের মূল লক্ষ্য। তাই মনে রাখতে হবে তথ্যই তথ্য অধিকার আইনের লক্ষ্য নয়। যেমন, সরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ডাক্তারদের উপস্থিতির সময়সূচী একটি উন্মুক্ত তথ্য। এ ধরণের তথ্য হাসপাতাল নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে রাখার কথা। এর জন্যে আইন প্রয়োগ ক’রে লিখিতভাবে আবেদন করার কোন প্রয়োজন হবার কথা না। আসল তথ্য হচ্ছে যে, ডাক্তাররা প্রতিদিন ক’টা থেকে ক’টা উপস্থিত থাকেন সে বিষয়ে হাজিরা খাতার তথ্য। এ তথ্য জানলে জনগণ ডাক্তারদের অনিয়ম ধরতে পারে ও কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার জন্যে চাপ দিতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য দেখা যায় যে উন্মুক্ত তথ্যও জনগণ সহজে পায় না, পেতে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। তথ্য অধিকার আইনের ভিত্তিতে এখন এসব তথ্য সরকারী অফিস সমূহে ও যেসব এনজিও তথ্য অধিকার আইনের আওতায় পড়ে তাদের অফিসে স্বেচ্ছায় প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই স্বেচ্ছাপ্রকাশের মধ্যে ওপরে উল্লেখিত ডাক্তারের প্রতিদিনের হাজিরার রেকর্ড স্থান পাবে কিনা, তা নিশিত করে বলা যায়। একমাত্র তথ্য অধিকার আইনের ভিত্তিতে ডাক্তারের হাজিরা খাতা দেখার মাধ্যমেই এ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে যে তথ্য অধিকার আইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যে যেসব তথ্য কোনো কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছায় প্রকাশ করতে চায় না সেইসব তথ্যকে  জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে প্রকাশ করতে বাধ্য করা।

আরও দেখুন

Comments are closed.